** Study Nutrition ওয়েবসাইটে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাগত ** নিউট্রিশন সাবজেক্ট এর প্রথম বাংলা ওয়েবসাইট **

3.9 Cholesterol-types in serum (elementary concept), normal serum level of total Cholesterol. Effect of excess level (কোলেস্টেরল - রক্তরসে তার বিভিন্ন ধরণ, রক্তে স্বাভাবিক মাত্রা, স্নেহপদার্থ ও কোলেস্টেরলের আধিক্যজনিত ফল)

 কোলেস্টেরলের বিভিন্ন ধরণ:

  1. লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (LDL):

    • এটি প্রায়ই "খারাপ" কোলেস্টেরল নামে পরিচিত।
    • রক্তনালীর প্রাচীরে জমা হয়ে এটি অ্যাথেরোসক্লেরোসিস (ধমনির সংকোচন) সৃষ্টি করতে পারে।
  2. হাই-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (HDL):

    • এটি "ভাল" কোলেস্টেরল নামে পরিচিত।
    • এটি অতিরিক্ত কোলেস্টেরলকে রক্তনালীর প্রাচীর থেকে সরিয়ে লিভারে নিয়ে যায়, যেখানে তা প্রক্রিয়াজাত হয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
  3. ভেরি লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (VLDL):

    • এটি মূলত ট্রাইগ্লিসারাইড বহন করে।
    • এটি রক্তে জমে LDL এর উৎপাদনে সহায়তা করতে পারে।
  4. ট্রাইগ্লিসারাইড (Triglycerides):

    • এটি স্নেহপদার্থের একটি ধরন যা শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি থেকে তৈরি হয় এবং ফ্যাট কোষে সঞ্চিত হয়।
    • উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

রক্তে কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা:

  • মোট কোলেস্টেরল: ২০০ মিগ্রা/ডেসিলিটার (mg/dL) এর নিচে
  • LDL কোলেস্টেরল: ১০০ mg/dL এর নিচে (যদি হৃদরোগ বা ডায়াবেটিস না থাকে), ৭০ mg/dL এর নিচে (যদি হৃদরোগ বা ডায়াবেটিস থাকে)
  • HDL কোলেস্টেরল: পুরুষদের জন্য ৪০ mg/dL এর উপরে, মহিলাদের জন্য ৫০ mg/dL এর উপরে
  • ট্রাইগ্লিসারাইড: ১৫০ mg/dL এর নিচে

স্নেহপদার্থ ও কোলেস্টেরলের আধিক্যজনিত ফল:

  1. অ্যাথেরোসক্লেরোসিস:

    • ধমনীতে প্লাক জমার ফলে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়।
    • হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং ধমনীর অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
  2. করোনারি আর্টারি ডিজিজ:

    • হৃদযন্ত্রে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীগুলো সংকুচিত বা বন্ধ হয়ে যায়।
    • হৃদরোগের আক্রমণ ঘটাতে পারে।
  3. স্ট্রোক:

    • মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা পড়লে ঘটে।
    • উচ্চ কোলেস্টেরল ধমনীর সংকোচন বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
  4. পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ (PAD):

    • শরীরের পেরিফেরাল (প্রান্তিক) ধমনীগুলোতে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়।
    • পায়ে এবং অন্যান্য অঙ্গে ব্যথা এবং সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
  5. হাইপারটেনশন (উচ্চ রক্তচাপ):

    • রক্তনালীর সংকোচনের ফলে রক্তচাপ বাড়ে।
    • উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

স্বাস্থ্যকর ডায়েট, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং ধূমপান পরিহার করার মাধ্যমে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

কোলেস্টেরল কেন গুরুত্বপূর্ণ?

কোলেস্টেরল একটি মৌলিক পদার্থ যা শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। যদিও অতিরিক্ত কোলেস্টেরল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কিন্তু সঠিক মাত্রায় এটি শরীরের জন্য অপরিহার্য। নিচে কোলেস্টেরলের গুরুত্বের কিছু কারণ তুলে ধরা হলো:

  1. হরমোন উৎপাদন:

    • কোলেস্টেরল বিভিন্ন হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে, যেমন অ্যাড্রেনাল হরমোন, এস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরন ইত্যাদি।
  2. ভিটামিন ডি উৎপাদন:

    • কোলেস্টেরল সূর্যের আলোতে পরিণত হয়ে ভিটামিন-D উৎপাদন করে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য এবং ইমিউন সিস্টেমের জন্য অপরিহার্য।
  3. কোষের গঠন:

    • কোলেস্টেরল কোষের মেমব্রেনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি কোষের স্থিতিস্থাপকতা ও স্থায়িত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  4. পাচক রস উৎপাদন:

    • কোলেস্টেরল লিভারে বিপাক হয়ে পিত্ত রস (bile acids) উৎপাদন করে, যা ফ্যাট বা চর্বি হজম করতে সাহায্য করে।
  5. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা:

    • মস্তিষ্কে প্রচুর কোলেস্টেরল থাকে, যা স্নায়ুর কার্যকারিতা ও নতুন স্নায়ুকোষ গঠনে সহায়ক।

কোলেস্টেরলের ভারসাম্য:

শরীরে কোলেস্টেরলের ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। বেশি মাত্রায় কোলেস্টেরল হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং অন্যান্য রক্তনালী সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং প্রয়োজনমতো চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে এই ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব।

সুতরাং, কোলেস্টেরল শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।

**হৃৎপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে ফ্যাট গ্রহণের প্রকৃতি:

স্বাস্থ্যকর হৃৎপিণ্ড এবং সঠিক রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখার জন্য ফ্যাটের প্রকার ও পরিমাণ উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। সব ফ্যাট একরকম নয়, এবং কিছু ফ্যাট হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, আবার কিছু ফ্যাট তা কমায়।

ফ্যাটের বিভিন্ন প্রকার:

  1. স্বাস্থ্যকর ফ্যাট:

    • মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (Monounsaturated fats):

      • উদাহরণ: অলিভ অয়েল, ক্যানোলা অয়েল, অ্যাভোকাডো, বাদাম এবং বীজ।
      • এই ফ্যাটগুলি এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল) কমাতে সাহায্য করে এবং এইচডিএল (ভাল কোলেস্টেরল) বৃদ্ধি করে।
    • পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (Polyunsaturated fats):

      • উদাহরণ: ফ্যাটি মাছ (যেমন স্যামন, ম্যাকেরেল), সূর্যমুখী তেল, সয়াবিন তেল, এবং ফ্ল্যাক্সসীড।
      • এই ফ্যাটগুলি এলডিএল কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
    • ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (Omega-3 fatty acids):

      • উদাহরণ: ফ্যাটি মাছ, ফ্ল্যাক্সসীড, চিয়া বীজ।
      • এই ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি রক্তচাপ কমাতে, হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করতে, এবং রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
  2. অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট:

    • স্যাচুরেটেড ফ্যাট (Saturated fats):

      • উদাহরণ: লাল মাংস, মাখন, চিজ, এবং পুরো দুধ।
      • বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে এলডিএল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করতে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
    • ট্রান্স ফ্যাট (Trans fats):

      • উদাহরণ: প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, বেকড পণ্য, এবং কিছু মার্জারিন।
      • এটি এলডিএল বৃদ্ধি করে এবং এইচডিএল কমিয়ে দেয়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়ায়।

ফ্যাট গ্রহণের পরামর্শ

  • ফ্যাটের পরিমাণ:

    • দৈনিক ক্যালোরির ২০-৩৫% ফ্যাট থেকে আসা উচিত। তবে, প্রতিদিন মোট ফ্যাটের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
  • স্বাস্থ্যকর ফ্যাট বেছে নিন:

    • অলিভ অয়েল বা ক্যানোলা অয়েল ব্যবহার করুন।
    • বাদাম এবং বীজ খান, বিশেষ করে আখরোট এবং আলমন্ড।
    • ফ্যাটি মাছ, যেমন স্যামন, সপ্তাহে অন্তত দুইবার খান।
  • অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট কমান:

    • লাল মাংস, মাখন, এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিমাণমতো খান।
    • ট্রান্স ফ্যাট সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন।
  • ফাইবার যুক্ত খাবার খান:

    • সম্পূর্ণ শস্য, শাকসবজি, এবং ফলমূল খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

ফলাফল

ফ্যাটের প্রকার এবং পরিমাণ সঠিকভাবে নির্বাচিত করলে হৃদরোগ এবং রক্ত সঞ্চালন সংক্রান্ত সমস্যার ঝুঁকি কমানো যায়। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন আনলে হৃৎপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক হয়।

**ভালো ফ্যাট: স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের প্রকার ও উৎস:

মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (Monounsaturated Fats)

উৎস:

  • অলিভ অয়েল
  • ক্যানোলা অয়েল
  • অ্যাভোকাডো
  • বাদাম (যেমন আলমন্ড, কাজু, পেস্তা)
  • বীজ (যেমন সানফ্লাওয়ার সীড, পামকিন সীড)

উপকারিতা:

  • এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল) কমায়
  • এইচডিএল (ভাল কোলেস্টেরল) বৃদ্ধি করে
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে

পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (Polyunsaturated Fats)

উৎস:

  • ফ্যাটি মাছ (যেমন স্যামন, ম্যাকেরেল, সারডিন)
  • সয়াবিন তেল
  • সূর্যমুখী তেল
  • ফ্ল্যাক্সসীড
  • চিয়া বীজ
  • ওয়ালনাট

উপকারিতা:

  • এলডিএল কোলেস্টেরল কমায়
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (Omega-3 Fatty Acids)

উৎস:

  • ফ্যাটি মাছ (যেমন স্যামন, ম্যাকেরেল, সারডিন)
  • ফ্ল্যাক্সসীড
  • চিয়া বীজ
  • ওয়ালনাট
  • সয়াবিন তেল

উপকারিতা:

  • রক্তচাপ কমায়
  • হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
  • রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমায়
  • প্রদাহ কমায়

ভালো ফ্যাট গ্রহণের পরামর্শ

  1. ফ্যাটি মাছ:

    • সপ্তাহে অন্তত দুইবার ফ্যাটি মাছ খান। এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রচুর পরিমাণে থাকে যা হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী।
  2. তেল:

    • রান্নার জন্য অলিভ অয়েল বা ক্যানোলা অয়েল ব্যবহার করুন। এতে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে।
  3. বাদাম ও বীজ:

    • প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম বা বীজ খান। এতে মনোআনস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা স্বাস্থ্যকর।
  4. অ্যাভোকাডো:

    • স্যালাড বা স্যান্ডউইচে অ্যাভোকাডো যোগ করুন। এটি মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের একটি সমৃদ্ধ উৎস।
  5. ফ্ল্যাক্সসীড এবং চিয়া বীজ:

    • দই, স্মুদি বা স্যালাডে ফ্ল্যাক্সসীড বা চিয়া বীজ যোগ করুন। এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রচুর পরিমাণে থাকে।

স্বাস্থ্যকর ফ্যাট গ্রহণ করলে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় এবং বিভিন্ন রক্ত সঞ্চালন সংক্রান্ত সমস্যার ঝুঁকি কমে।