কোলেস্টেরলের বিভিন্ন ধরণ:
লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (LDL):
- এটি প্রায়ই "খারাপ" কোলেস্টেরল নামে পরিচিত।
- রক্তনালীর প্রাচীরে জমা হয়ে এটি অ্যাথেরোসক্লেরোসিস (ধমনির সংকোচন) সৃষ্টি করতে পারে।
হাই-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (HDL):
- এটি "ভাল" কোলেস্টেরল নামে পরিচিত।
- এটি অতিরিক্ত কোলেস্টেরলকে রক্তনালীর প্রাচীর থেকে সরিয়ে লিভারে নিয়ে যায়, যেখানে তা প্রক্রিয়াজাত হয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
ভেরি লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (VLDL):
- এটি মূলত ট্রাইগ্লিসারাইড বহন করে।
- এটি রক্তে জমে LDL এর উৎপাদনে সহায়তা করতে পারে।
ট্রাইগ্লিসারাইড (Triglycerides):
- এটি স্নেহপদার্থের একটি ধরন যা শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি থেকে তৈরি হয় এবং ফ্যাট কোষে সঞ্চিত হয়।
- উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
রক্তে কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা:
- মোট কোলেস্টেরল: ২০০ মিগ্রা/ডেসিলিটার (mg/dL) এর নিচে
- LDL কোলেস্টেরল: ১০০ mg/dL এর নিচে (যদি হৃদরোগ বা ডায়াবেটিস না থাকে), ৭০ mg/dL এর নিচে (যদি হৃদরোগ বা ডায়াবেটিস থাকে)
- HDL কোলেস্টেরল: পুরুষদের জন্য ৪০ mg/dL এর উপরে, মহিলাদের জন্য ৫০ mg/dL এর উপরে
- ট্রাইগ্লিসারাইড: ১৫০ mg/dL এর নিচে
স্নেহপদার্থ ও কোলেস্টেরলের আধিক্যজনিত ফল:
অ্যাথেরোসক্লেরোসিস:
- ধমনীতে প্লাক জমার ফলে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়।
- হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং ধমনীর অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
করোনারি আর্টারি ডিজিজ:
- হৃদযন্ত্রে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীগুলো সংকুচিত বা বন্ধ হয়ে যায়।
- হৃদরোগের আক্রমণ ঘটাতে পারে।
স্ট্রোক:
- মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা পড়লে ঘটে।
- উচ্চ কোলেস্টেরল ধমনীর সংকোচন বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ (PAD):
- শরীরের পেরিফেরাল (প্রান্তিক) ধমনীগুলোতে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়।
- পায়ে এবং অন্যান্য অঙ্গে ব্যথা এবং সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
হাইপারটেনশন (উচ্চ রক্তচাপ):
- রক্তনালীর সংকোচনের ফলে রক্তচাপ বাড়ে।
- উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
স্বাস্থ্যকর ডায়েট, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং ধূমপান পরিহার করার মাধ্যমে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
কোলেস্টেরল কেন গুরুত্বপূর্ণ?
কোলেস্টেরল একটি মৌলিক পদার্থ যা শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। যদিও অতিরিক্ত কোলেস্টেরল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কিন্তু সঠিক মাত্রায় এটি শরীরের জন্য অপরিহার্য। নিচে কোলেস্টেরলের গুরুত্বের কিছু কারণ তুলে ধরা হলো:
হরমোন উৎপাদন:
- কোলেস্টেরল বিভিন্ন হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে, যেমন অ্যাড্রেনাল হরমোন, এস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরন ইত্যাদি।
ভিটামিন ডি উৎপাদন:
- কোলেস্টেরল সূর্যের আলোতে পরিণত হয়ে ভিটামিন-D উৎপাদন করে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য এবং ইমিউন সিস্টেমের জন্য অপরিহার্য।
কোষের গঠন:
- কোলেস্টেরল কোষের মেমব্রেনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি কোষের স্থিতিস্থাপকতা ও স্থায়িত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করে।
পাচক রস উৎপাদন:
- কোলেস্টেরল লিভারে বিপাক হয়ে পিত্ত রস (bile acids) উৎপাদন করে, যা ফ্যাট বা চর্বি হজম করতে সাহায্য করে।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা:
- মস্তিষ্কে প্রচুর কোলেস্টেরল থাকে, যা স্নায়ুর কার্যকারিতা ও নতুন স্নায়ুকোষ গঠনে সহায়ক।
কোলেস্টেরলের ভারসাম্য:
শরীরে কোলেস্টেরলের ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। বেশি মাত্রায় কোলেস্টেরল হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং অন্যান্য রক্তনালী সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং প্রয়োজনমতো চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে এই ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব।
সুতরাং, কোলেস্টেরল শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
**হৃৎপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে ফ্যাট গ্রহণের প্রকৃতি: