** Study Nutrition ওয়েবসাইটে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাগত ** নিউট্রিশন সাবজেক্ট এর প্রথম বাংলা ওয়েবসাইট **

2.11 Deficiency and excess intake effects (অভাব ও আধিক্যজনিত ফল)

প্রোটিনের অভাব এবং আধিক্য উভয়েরই শরীরে নানা ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। নিচে প্রোটিনের অভাব ও আধিক্যজনিত ফলাফল নিয়ে আলোচনা করা হলো:

প্রোটিনের অভাব (Protein Deficiency):

প্রোটিনের অভাব শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এটি সাধারণত অপুষ্টি বা খাদ্যে পর্যাপ্ত প্রোটিনের অভাবের কারণে ঘটে। কিছু প্রধান লক্ষণ এবং ফলাফল হলো:

  1. কোষ ও টিস্যু মেরামতের ঘাটতি: প্রোটিনের অভাবে শরীরের কোষ ও টিস্যু মেরামত ও বৃদ্ধিতে সমস্যা হয়।
  2. অ্যানিমিয়া: হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে প্রোটিনের ভূমিকা থাকে, তাই এর অভাবে অ্যানিমিয়া হতে পারে।
  3. ইমিউন সিস্টেম দুর্বলতা: প্রোটিনের অভাবে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যায়, যা সংক্রমণ ও রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
  4. পেশী দুর্বলতা এবং ক্ষয়: প্রোটিন পেশী গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাই এর অভাবে পেশী দুর্বলতা এবং ক্ষয় হতে পারে।
  5. হরমোনের সমস্যা: প্রোটিন হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে, তাই এর অভাবে হরমোনজনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  6. স্লো গ্রোথ (বাচ্চাদের ক্ষেত্রে): প্রোটিনের অভাবে বাচ্চাদের শারীরিক এবং মানসিক বৃদ্ধি ধীর হতে পারে।
  7. এডিমা: শরীরের তরল ব্যালান্সে সমস্যা হওয়ার কারণে পা, পায়ের পাতা এবং অন্যান্য স্থানে ফোলাভাব দেখা দিতে পারে।
  8. চুল পড়া এবং ত্বকের সমস্যা: প্রোটিনের অভাবে চুল পড়া, ত্বকের শুষ্কতা ও বিভিন্ন ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

PEM (Protein-Energy Malnutrition): প্রোটিন এনার্জি ম্যালনিউট্রিশন হল অপুষ্টির একটি জটিলতা, যা শরীরে পর্যাপ্ত প্রোটিন ও ক্যালোরির অভাবে ঘটে। এটি প্রধানত শিশুদের মধ্যে দেখা যায়, কিন্তু প্রাপ্তবয়স্করাও এতে আক্রান্ত হতে পারে। PEM সাধারণত নিম্ন আয়ের দেশে বেশি দেখা যায় যেখানে খাদ্যের অভাব থাকে।

প্রকারভেদ:

প্রোটিন এনার্জি ম্যালনিউট্রিশনের দুটি প্রধান প্রকারভেদ রয়েছে:

  1. মারাসমাস (Marasmus):

    • বিবরণ: মারাসমাস হল প্রোটিন এবং ক্যালোরি উভয়ের গুরুতর অভাবের ফলে সৃষ্ট অপুষ্টি।
    • লক্ষণ: শরীরের চর্বি এবং পেশী দ্রুত ক্ষয় হয়ে যায়, চামড়া এবং হাড় দৃশ্যমান হয়, শরীরে তীব্র দুর্বলতা দেখা দেয়, শিশুদের বৃদ্ধি থেমে যায়, এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
    • কারণ: দীর্ঘ সময় ধরে পর্যাপ্ত খাদ্য ও পুষ্টি না পাওয়া।
  2. কোয়াশিওকর (Kwashiorkor):

    • বিবরণ: কোয়াশিওকর হল প্রোটিনের গুরুতর অভাবের ফলে সৃষ্ট অপুষ্টি, যদিও ক্যালোরি পর্যাপ্ত থাকতে পারে।
    • লক্ষণ: পেট, পা এবং মুখে ফোলাভাব (এডিমা), চামড়া ও চুলের রং পরিবর্তন, ত্বক শুকিয়ে যাওয়া এবং ফেটে যাওয়া, মানসিক অস্থিরতা, এবং চর্বির স্তর বজায় থাকলেও পেশী ক্ষয় হয়।
    • কারণ: প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যের অভাব।

প্রোটিন এনার্জি ম্যালনিউট্রিশনের কারণ:

  1. খাদ্যের অভাব: পর্যাপ্ত খাদ্য এবং পুষ্টির অভাব।
  2. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: প্রোটিন এবং ক্যালোরির ঘাটতি।
  3. অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ: জীবাণু এবং প্যারাসাইটের কারণে পুষ্টির শোষণে বাধা।
  4. অজ্ঞতা: পুষ্টি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকা।
  5. গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়ের অপুষ্টি: মায়ের পুষ্টির অভাব শিশুতে প্রভাব ফেলে।

প্রতিকার ও প্রতিরোধ:

  1. সুষম খাদ্য গ্রহণ: প্রোটিন এবং ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন দুধ, ডিম, মাংস, মাছ, ডাল, বাদাম ইত্যাদি গ্রহণ।
  2. শিক্ষা ও সচেতনতা: পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি।
  3. স্বাস্থ্যসেবা ও স্যানিটেশন: স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করা।
  4. সম্পূরক খাদ্য প্রদান: অপুষ্ট শিশুদের জন্য সম্পূরক খাদ্য এবং পুষ্টি প্রদান।
  5. গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের যত্ন: তাদের পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করা।

প্রোটিনের আধিক্য (Protein Excess):

অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণের ফলে শরীরে বিভিন্ন প্রভাব পড়তে পারে। কিছু প্রধান লক্ষণ এবং ফলাফল হলো:

  1. কিডনির উপর চাপ: অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা দীর্ঘমেয়াদে কিডনির কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।
  2. ডিহাইড্রেশন: অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণের ফলে শরীরে পানি শোষণের প্রয়োজন বেড়ে যায়, যা ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি করতে পারে।
  3. ক্যালসিয়াম লস: উচ্চ প্রোটিনযুক্ত ডায়েট ক্যালসিয়াম ক্ষতি বাড়াতে পারে, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
  4. হৃদরোগের ঝুঁকি: প্রাণীজ প্রোটিনের আধিক্য বিশেষ করে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরলের উচ্চমাত্রা থাকার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  5. হজমের সমস্যা: অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণের ফলে হজমের সমস্যা যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস, এবং ফোলাভাব হতে পারে।
  6. ওজন বৃদ্ধি: অতিরিক্ত প্রোটিন ক্যালোরির পরিমাণ বাড়াতে পারে, যা ওজন বৃদ্ধি করতে পারে।

**ভারসাম্যপূর্ণ প্রোটিন গ্রহণের গুরুত্ব:

প্রোটিনের অভাব ও আধিক্য উভয়েরই সমস্যা এড়াতে সুষম খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে প্রোটিনের সঠিক পরিমাণ বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কের জন্য দৈনিক প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা সাধারণত তার ওজনের প্রতি কেজিতে ০.৮ গ্রাম করে ধরা হয়। তবে এটি ব্যক্তির শারীরিক কার্যক্রম, বয়স, লিঙ্গ এবং স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।