মানবদেহে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ সঠিকভাবে বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কার্বোহাইড্রেটের আধিক্য এবং অভাব উভয়ই স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
কার্বোহাইড্রেটের আধিক্য:
কার্বোহাইড্রেটের অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রধানত:
- ওজন বৃদ্ধি: অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট শরীরে গ্লাইকোজেন হিসেবে সঞ্চিত হয়। এই গ্লাইকোজেনের ভাণ্ডার পূর্ণ হলে, অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট চর্বিতে রূপান্তরিত হয় এবং ওজন বাড়ায়।
- টাইপ ২ ডায়াবেটিস: দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের ফলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কমে যায় এবং ইনসুলিন প্রতিরোধের সৃষ্টি হয়, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
- হৃদরোগ: অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের ফলে এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
- চাপ বৃদ্ধি: অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের ফলে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বাড়ায়।
- দাঁতের সমস্যা: অতিরিক্ত শর্করা দাঁতের ক্ষয় সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যদি মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া হয়।
কার্বোহাইড্রেটের অভাব:
কার্বোহাইড্রেটের ঘাটতি মানবদেহের বিভিন্ন সিস্টেমের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রধানত:
- শক্তির ঘাটতি: কার্বোহাইড্রেট হল শরীরের প্রধান শক্তির উৎস। এর অভাবে শরীরে শক্তির অভাব ঘটে এবং ক্লান্তি অনুভব হয়।
- কিটোসিস: পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেট না থাকলে শরীর চর্বি ভাঙতে শুরু করে, যা কিটোন উৎপন্ন করে। কিটোসিস শারীরিক ও মানসিক কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে।
- মানসিক অবসাদ: গ্লুকোজ মস্তিষ্কের প্রধান শক্তির উৎস। কার্বোহাইড্রেটের অভাবে মস্তিষ্ক ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, যা মনোযোগ, স্মৃতি এবং মানসিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলে।
- পেশীর ক্ষয়: কার্বোহাইড্রেটের অভাবে শরীর প্রোটিন ভাঙতে শুরু করে, যা পেশীর ক্ষয় ঘটায়।
- হজম সমস্যা: অপাচ্য কার্বোহাইড্রেট যেমন ফাইবারের অভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্যান্য হজম সমস্যার সৃষ্টি হয়।
কার্বোহাইড্রেটের সঠিক পরিমাণ:
একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য কার্বোহাইড্রেটের মোট দৈনিক ক্যালোরির ৪৫-৬৫% হওয়া উচিত। এই পরিমাণ সাধারণত ২৫০-৩০০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট দৈনিক গ্রহণের মাধ্যমে পূরণ করা যেতে পারে।
সঠিক কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের জন্য পরামর্শ:
- পূর্ণ শস্য: ওট, ব্রাউন রাইস, বার্লি, এবং গোটা গমের মতো পূর্ণ শস্য গ্রহণ করুন।
- ফল ও শাকসবজি: বিভিন্ন ধরনের ফল এবং শাকসবজি প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করুন।
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন শিম, মটর, বাদাম, এবং বীজ খান।
- শর্করা পরিহার: অতিরিক্ত চিনি ও পরিশোধিত শর্করা যেমন মিষ্টি পানীয়, মিষ্টি খাবার, এবং সাদা পাউরুটি এড়িয়ে চলুন।