** Study Nutrition ওয়েবসাইটে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাগত ** নিউট্রিশন সাবজেক্ট এর প্রথম বাংলা ওয়েবসাইট **

1.7 Energy from Food & Calorie Concept (খাদ্যের তাপনমূল্য ও ক্যালোরি সংক্রান্ত ধারণা )

কিভাবে খাদ্যস্থিত শক্তি দৈহিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়?

খাদ্যে থাকা শক্তি আমাদের দেহে জটিল জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দৈহিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়াটি পরিপাক এবং বিপাক নামে পরিচিত।

পরিপাক হলো খাদ্যকে ছোট ছোট অণুতে ভেঙে ফেলা যা আমাদের দেহ শোষণ করতে পারে। এটি মুখ, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র এবং বৃহদন্ত্রের মাধ্যমে ধাপে ধাপে সম্পন্ন হয়।

বিপাক হলো সেই প্রক্রিয়া যেখানে ছোট ছোট খাদ্য অণুগুলি আরও ভেঙে যায় এবং শক্তি উৎপাদন করে। এই প্রক্রিয়া কোষের ভেতরে ঘটে, বিশেষ করে মাইটোকন্ড্রিয়া নামক অঙ্গাণুতে।

খাদ্যস্থিত শক্তি দৈহিক শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপ:

  1. খাদ্য গ্রহণ:

    • খাদ্য খাওয়ার মাধ্যমে শক্তি গ্রহণ।
    • খাদ্যের প্রধান উপাদানগুলি হল কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, এবং স্নেহপদার্থ বা ফ্যাট।
  2. হজম প্রক্রিয়া:

    • মুখ, পাকস্থলী, এবং অন্ত্রের মাধ্যমে খাদ্য হজম হয়।
    • এনজাইমের সাহায্যে খাদ্য ভেঙে গ্লুকোজ, অ্যামিনো অ্যাসিড, এবং ফ্যাটি অ্যাসিডে পরিণত হয়।
  3. শোষণ:

    • ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে গ্লুকোজ, অ্যামিনো অ্যাসিড, এবং ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তপ্রবাহে শোষিত হয়।
  4. রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে পরিবহন:

    • রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে এ সমস্ত পুষ্টি উপাদান শরীরের বিভিন্ন কোষে পরিবাহিত হয়।
  5. কোষে শক্তি উৎপাদন:

    • কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া এ উপাদানগুলি ব্যবহার করে অ্যাডেনোসিন ট্রাইফসফেট (ATP) উৎপাদন করে।
    • গ্লুকোজের অক্সিডেশন প্রক্রিয়া (সেলুলার রেস্পিরেশন) মাধ্যমে ATP উৎপাদন হয়:
      • গ্লাইকোলাইসিস
      • ক্রেবস সাইকেল (ট্রাইকার্বক্সিলিক অ্যাসিড চক্র)
      • ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট চেইন
  6. দৈহিক শক্তি উৎপাদন:

    • উৎপাদিত ATP ব্যবহার করে পেশি সংকোচন ও অন্যান্য শারীরিক কাজ সম্পন্ন হয়।
    • দৈহিক কর্ম যেমন চলাফেরা, কাজ করা, খেলাধুলা করা ইত্যাদিতে এ শক্তি ব্যবহৃত হয়।
খাদ্যস্থিত শক্তি দৈহিক শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াটি একটি ছকের মাধ্যমে নিম্নরূপ প্রদর্শন করা যায়: 

খাদ্য গ্রহণ -> হজম প্রক্রিয়া -> শোষণ -> রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে পরিবহন -> কোষে শক্তি উৎপাদন -> দৈহিক শক্তি উৎপাদন

খাদ্যের তাপনমূল্য (Calorific Value) এবং ক্যালোরি (Calorie) সম্পর্কে ধারণা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য গ্রহণ এবং পুষ্টির মূল্যায়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো খাদ্য থেকে কতটুকু শক্তি আমরা পাচ্ছি তা নির্ধারণ করে।

ক্যালোরি (Calorie)

ক্যালোরি হলো শক্তির একটি একক। খাদ্যে উপস্থিত পুষ্টি উপাদান যখন দেহে বিপাকক্রিয়ার মাধ্যমে ভেঙে যায়, তখন এই ক্যালোরি মুক্ত হয়। খাদ্য থেকে প্রাপ্ত শক্তি সাধারণত ক্যালোরিতে মাপা হয়।
  • সংজ্ঞা: খাদ্যে থাকা শক্তির একককে ক্যালোরি বলে।
  • মাপকাঠি: কিলোক্যালোরি (kcal) বা ক্যালোরি (cal) ব্যবহার করে মাপা হয়।
  • সম্পর্ক: 1 কিলোক্যালোরি = 1000 ক্যালোরি।
  •       ১ ক্যালোরি (cal): ১ গ্রাম পানির তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি।
          ১ কিলোক্যালোরি (kcal) বা খাদ্য ক্যালোরি: ১ কিলোক্যালোরি সমান ১০০০ ক্যালোরি। খাদ্যের শক্তি সাধারণত কিলোক্যালোরি (kcal) হিসেবে প্রকাশ করা হয়। 

    ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ নিউট্রিশনাল সায়েন্স তাপশক্তির পরিবর্তিত আধুনিক একক হিসাবে কিলোক্যালোরীর পরিবর্তে মেগাজুল ব্যবহারের প্রস্তাব করেছে। 

    কিলোক্যালোরি (kcal): 1 কিলোক্যালোরি = 1000 ক্যালোরি = 4184 জুল

    ১ কিলোক্যালোরি (kcal)=কত মেগাজুল ?

    ১ কিলোক্যালোরি (kcal) = ৪,১৮৪ জুল (J)

    এবং

    ১ মেগাজুল (MJ) = ১,০০০,০০০ জুল (J)

    সুতরাং,

    ১ কিলোক্যালোরি (kcal) = ৪,১৮৪ জুল (J) = ৪,১৮৪ / ১,০০০,০০০ মেগাজুল (MJ)

    এটি সমান হয়:

    1 kcal=0.004184 MJ1 \text{ kcal} = 0.004184 \text{ MJ}

    এখন, উল্টোটি হিসাব করতে:

    1 kJ=1 kcal4.1841 \text{ kJ} = \frac{1 \text{ kcal}}{4.184}

    সুতরাং,

    1 kJ0.239 kcal1 \text{ kJ} \approx 0.239 \text{ kcal}

    এবং

    1 MJ=1000 kJ1 \text{ MJ} = 1000 \text{ kJ}

    সুতরাং,

    1 MJ=1000 kJ4.184 kJ/kcal1 \text{ MJ} = \frac{1000 \text{ kJ}}{4.184 \text{ kJ/kcal}}

    এটি সমান হবে:

    1 MJ=10004.184 kcal1 \text{ MJ} = \frac{1000}{4.184} \text{ kcal}

    1 MJ239 kcal1 \text{ MJ} \approx 239 \text{ kcal}

    খাদ্যের তাপশক্তি পরিমাপক যন্ত্র কি ?

    খাদ্যের তাপশক্তি পরিমাপ করার জন্য বিভিন্ন ধরণের যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। সাধারণত, খাদ্যের ক্যালোরি বা তাপশক্তি পরিমাপ করার জন্য ক্যালোরিমিটার ব্যবহার করা হয়। এখানে কিছু সাধারণ ধরণের ক্যালোরিমিটার এবং অন্যান্য যন্ত্রের নাম উল্লেখ করা হলো:

    1. বম্ব ক্যালোরিমিটার (Bomb Calorimeter):

      • এটি খাদ্যের জ্বলন তাপশক্তি পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। খাদ্যের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণকে একটি বন্ধ পাত্রে (বোম) রাখা হয় এবং অক্সিজেনের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এরপর উৎপন্ন তাপ পরিমাপ করা হয়।


    1. ডিফারেন্সিয়াল স্ক্যানিং ক্যালোরিমিটার (Differential Scanning Calorimeter, DSC):

      • এটি খাদ্যের তাপপ্রবাহের পরিবর্তন পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। দুটি নমুনা - একটি পরীক্ষিত নমুনা এবং একটি রেফারেন্স, ধীরে ধীরে উত্তপ্ত বা শীতল করা হয় এবং তাদের তাপীয় প্রতিক্রিয়া পরিমাপ করা হয়।
    2. আয়সোথার্মাল ক্যালোরিমিটার (Isothermal Calorimeter):

      • এই যন্ত্রটি একটি স্থির তাপমাত্রায় খাবারের তাপশক্তি পরিমাপ করে। এটি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী তাপমাত্রা পরিবর্তনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
    3. মাইক্রোক্যালোরিমিটার (Microcalorimeter):

      • এটি খাদ্যের খুব ছোট পরিমাণের তাপশক্তি পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে গবেষণা ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়।
    4. বায়োলজিক্যাল ক্যালোরিমিটার (Biological Calorimeter):

      • এটি জীবন্ত কোষ বা জীবাণুর তাপশক্তি পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের সময় জীবন্ত কোষের তাপপ্রবাহ পরিমাপ করা হয়।

    এই যন্ত্রগুলির মধ্যে বম্ব ক্যালোরিমিটার সবচেয়ে সাধারণভাবে ব্যবহৃত হয় খাদ্যের জ্বলন তাপশক্তি নির্ধারণের জন্য। তবে, নির্দিষ্ট প্রয়োগ এবং গবেষণা উদ্দেশ্য অনুযায়ী অন্যান্য ক্যালোরিমিটারও ব্যবহৃত হয়।

    মানুষের শক্তি পরিমাপক যন্ত্রের নাম বেনেডিক্ট রথ অ্যাপারেটাস।

    (বেনেডিক্ট রথ অ্যাপারেটাস হল একটি ক্যালোরিমিটার যা খাবারের তাপ শক্তি পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি 1910 সালে আমেরিকান শারীরবিদ ফ্রান্সিস গ্যানো বেনেডিক্ট এবং হ্যারিস ম্যাকক্লুর রথ দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল।

    বেনেডিক্ট অ্যাপারেটাস একটি বদ্ধ পাত্র নিয়ে গঠিত যা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জল দিয়ে ভরা থাকে। খাবারের নমুনা পোড়ানো হয় এবং উৎপন্ন তাপ জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। তাপমাত্রার পরিবর্তন থেকে খাবারের ক্যালোরি মান নির্ধারণ করা হয়।

    বেনেডিক্ট অ্যাপারেটাস বিপাকের গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এটি ব্যবহার করে, বিজ্ঞানীরা মৌলিক বিপাক হার (BMR) পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছেন, যা বিশ্রামের সময় শরীরে বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির পরিমাণ। তারা বিভিন্ন খাবার এবং ক্রিয়াকলাপের থার্মিক প্রভাবও পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছেন।)

    তাপনমূল্য (Calorific Value)

    তাপনমূল্য হল নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য পুড়িয়ে কতটুকু তাপ বা শক্তি উৎপন্ন হয় তা মাপা হয়। তাপনমূল্য দ্বারা বোঝা যায় যে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য কতটুকু শক্তি প্রদান করতে পারে। এটি সাধারণত কিলোক্যালোরি (kcal) বা কিলোজুল (kJ) হিসেবে প্রকাশ করা হয়।

  • সংজ্ঞা: খাদ্যে থাকা শক্তির পরিমাণকে খাদ্যের তাপনমূল্য বলে।
  • মাপকাঠি: জুল (J) বা ক্যালোরি (cal) ব্যবহার করে মাপা হয়।
  • গুরুত্ব: খাদ্যের তাপনমূল্য জানা আমাদের দৈনন্দিন ক্যালোরি চাহিদা নির্ধারণ করতে এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে সাহায্য করে।

  • বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের ক্যালোরি

    খাদ্যের প্রধান পুষ্টি উপাদানগুলির প্রতি গ্রামে ক্যালোরি মূল্য নিম্নরূপ:

    • কার্বোহাইড্রেট: ৪ ক্যালোরি/গ্রাম
    • প্রোটিন: ৪ ক্যালোরি/গ্রাম
    • চর্বি: ৯ ক্যালোরি/গ্রাম
    • অ্যালকোহল: ৭ ক্যালোরি/গ্রাম
    উদাহরণ

    যেমন:

    • এক কাপ সেদ্ধ চাল (প্রায় ১৫০ গ্রাম) প্রায় ২০০ ক্যালোরি শক্তি দেয়।
    • একটি মাঝারি আকারের আপেল (প্রায় ১৫০ গ্রাম) প্রায় ৭০-৮০ ক্যালোরি শক্তি দেয়।
    • ১০০ গ্রাম মুরগির মাংস (সিদ্ধ) প্রায় ১৬৫ ক্যালোরি শক্তি দেয়।
    দৈনন্দিন ক্যালোরি চাহিদা

    দৈনন্দিন ক্যালোরি চাহিদা ব্যক্তির বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক কার্যক্রমের স্তর এবং স্বাস্থ্য অবস্থার উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে।

    • প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ: সাধারণত ২০০০-২৫০০ ক্যালোরি/দিন।
    • প্রাপ্তবয়স্ক নারী: সাধারণত ১৬০০-২০০০ ক্যালোরি/দিন।
    • শিশু এবং কিশোর-কিশোরী: সাধারণত ১৪০০-২৬০০ ক্যালোরি/দিন।

    উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাদ্য:

    • ফ্যাটযুক্ত খাবার (যেমন: ভাজা খাবার, ফাস্ট ফুড, মিষ্টি)
    • চিনিযুক্ত পানীয় (যেমন: সোডা, জুস)
    • প্রক্রিয়াজাত খাবার (যেমন: স্ন্যাকস, সিরিয়াল)

    নিম্ন ক্যালোরিযুক্ত খাদ্য:

    • ফল ও শাকসবজি
    • সাধারণ শর্করা জাতীয় খাবার (যেমন: ভাত, রুটি, আটা)
    • চর্বিহীন প্রোটিন জাতীয় খাবার (যেমন: মাছ, মাংস, ডিম)

    ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ:

    • সুস্থ ওজন বজায় রাখার জন্য আমাদের ক্যালোরি গ্রহণ ও ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।
    • বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং স্থূলতা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসের মতো ঝুঁকি বাড়তে পারে।
    • কম ক্যালোরি গ্রহণ করলে ওজন কমতে পারে এবং পুষ্টি ঘাটতির ঝুঁকি বাড়তে পারে।