অপুষ্টি (Malnutrition)
"Malnutrition" শব্দটি দুটি লাতিন শব্দ থেকে এসেছে:
- "Mal-" মানে "খারাপ", "অস্বাভাবিক" বা "অস্বাস্থ্যকর"।
- "Nutrition" মানে "পুষ্টি"।
সুতরাং, "malnutrition" এর অর্থ "খারাপ পুষ্টি" বা "অপর্যাপ্ত পুষ্টি"।
এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল ১৯ শতকের শেষের দিকে, যখন বিজ্ঞানীরা বুঝতে শুরু করেন যে কিছু অসুস্থতা খাদ্যে পুষ্টির অভাবের কারণে হয়।
আজ, "malnutrition" শব্দটি বিভিন্ন ধরণের পুষ্টির ঘাটতি বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে রয়েছে:
- অপুষ্টি: যখন একজন ব্যক্তির পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালোরি এবং পুষ্টি উপাদান পায় না।
- মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি: যখন একজন ব্যক্তির পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বা খনিজ পায় না।
- ওবেসিটি: যখন একজন ব্যক্তির অতিরিক্ত শরীরের চর্বি থাকে।
অপুষ্টি হলো শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি উপাদান না পাওয়ার অবস্থা। এর মধ্যে অতিরিক্ত পুষ্টি (যেমন, স্থুলতা) এবং পুষ্টির অভাব (যেমন, ক্ষুধা, ক্ষুদ্র পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি) উভয়ই অন্তর্ভুক্ত।
ভারতে অপুষ্টি একটি জটিল সমস্যা যার একাধিক কারণ রয়েছে।
কিছু প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
1. দারিদ্র্য: দারিদ্র্যের কারণে অনেক মানুষ পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার কিনতে বা উৎপাদন করতে পারে না।
2. খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা: খরা, বন্যা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক এলাকায় খাদ্যের অভাব দেখা দেয়।
3. অপর্যাপ্ত শিক্ষা: অনেক মানুষ, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়, পুষ্টি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখে না এবং স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।
4. শিশুদের দুর্বল যত্ন: শিশুদের স্তন্যপান না করানো, পরিপূরক খাবার দেরিতে শুরু করা এবং অসুস্থতার সময় যথাযথ চিকিৎসা না দেওয়া অপুষ্টির ঝুঁকি বাড়ায়।
5. লিঙ্গ বৈষম্য: মেয়েদের এবং মহিলাদের প্রায়শই ছেলেদের এবং পুরুষদের তুলনায় কম খাবার দেওয়া হয় এবং তাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণের সম্ভাবনা কম থাকে।
6. সংক্রমণ: ডায়রিয়া এবং হেলমিন্থ সংক্রমণের মতো সংক্রমণগুলি পুষ্টি শোষণে বাধা দিতে পারে এবং অপুষ্টির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
7. অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা: অনেক এলাকায়, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়, মানুষের পুষ্টির ঘাটতির চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা অ্যাক্সেস নেই।
8. জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তন খরা এবং বন্যার মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলির ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে, যা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং অপুষ্টির ঝুঁকি বাড়ায়।
অপুষ্টির শ্রেণীবিভাগ (Classification of Malnutrition):
কার্বোহাইড্রেট:
- অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট শরীরে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে, যার ফলে ওজন বৃদ্ধি, টাইপ 2 ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং কিছু ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
- পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট যেমন সাদা রুটি, সাদা চাল এবং মিষ্টি পানীয়, রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয় এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রোটিন:
- অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং কিডনি পাথরের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- প্রাণীজ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন লাল মাংস, হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ফ্যাট:
- অতিরিক্ত চর্বি, বিশেষ করে স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স ফ্যাট, ওজন বৃদ্ধি, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিছু ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- কম চর্বি শরীরকে প্রয়োজনীয় অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড সরবরাহ করতে পারে না, যার ফলে ত্বকের সমস্যা, দুর্বল চুল এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখা দিতে পারে।
বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ লবণের আধিক্যের ফলে হতে পারে এমন কিছু সমস্যা:
ভিটামিন:
- ভিটামিন A: অতিরিক্ত ভিটামিন A মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি বৃদ্ধি এবং লিভারের ক্ষতি করতে পারে।
- ভিটামিন D: অতিরিক্ত ভিটামিন D রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যার ফলে কিডনি পাথর, পেশীতে দুর্বলতা এবং বমি বমি ভাব হতে পারে।
- ভিটামিন E: অতিরিক্ত ভিটামিন E রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ায় এবং দুর্বলতা, মাথাব্যথা এবং পেটে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
- ভিটামিন K: অতিরিক্ত ভিটামিন K রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ায় এবং লিভারের ক্ষতি করতে পারে।
খনিজ লবণ:
- আয়রন: অতিরিক্ত আয়রন পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া এবং লিভারের ক্ষতি করতে পারে।
- জিন্স: অতিরিক্ত জিন্স কিডনি পাথর, বমি বমি ভাব এবং পেটে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
- ক্যালসিয়াম: অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম কিডনি পাথর, হাড়ের ক্ষতি এবং পেটে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
- জিঙ্ক: অতিরিক্ত জিঙ্ক তামার শোষণে বাধা দেয়, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং মাথাব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
ঊনপুষ্টি শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক এবং গর্भवতী নারীদের সবাইকেই প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন:
- শারীরিক বৃদ্ধি বাধা (শিশুদের ক্ষেত্রে)
- দুর্বলতা
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস
- সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি
- ক্লান্তি
- মানসিক সমস্যা
- মৃত্যু (বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে)
ঊনপুষ্টিজনিত দৈহিক উপসর্গ:
২। মুখমন্ডল: শুষ্ক হয়ে যায়। নাকের পাশটা ফুলে ওঠে।
৩। ঠোঁট: ঠোঁটের কোণে ঘা হয়, শুষ্ক ও খসখসে হয়। অ্যাঙ্গুলার স্টোমাটাইটিস ও চিলোসিস দেখা যায়।
৪। জিভ: উপরিভাগে ছোট ছোট গুটি দেখা যায়, ব্যথা হয় ও স্বাদ নষ্ট হয়।
৫। চোখ: চোখের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়। কর্নিয়া শুকিয়ে যায় যাকে জেরোপথ্যালমিয়া বলে। চোক ফোটফোবিয়া হয় অর্থাৎ এল পড়লে চোখ ছোট হয়ে আসে। অনেকক্ষেত্রে চোক বিটস্স্পট তৈরী হয়।
৬। ত্বক: কুঁচকে যায়, গুটি হয়, ছোট ছোট দাগ হয়।
৭। দাঁত ও মাড়ি: দাঁতের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়। মাড়ি ফুলে ওঠে ও রক্তক্ষরণ হয়।
৮। দেহের কাঠামো ও মাংসপেশি: দেহ শীর্ণ ও পেশী দুর্বল হয়।
৯। গ্রন্থি: ক্রিয়া ব্যাহত হয়।
১০। স্নায়ুতন্ত্র: মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।
১১। অন্যান্য সমস্যা: হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া ব্যাহত হয়।