** Study Nutrition ওয়েবসাইটে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাগত ** নিউট্রিশন সাবজেক্ট এর প্রথম বাংলা ওয়েবসাইট **

1.5 Nutrients & Their Classification (পুষ্টি উপাদান ও তার শ্রেণীবিভাগ )

পরিপোষক / খাদ্য উপাদান / পুষ্টি উপাদান / পৌষ্টিক পদার্থ (Nutrients)

পুষ্টি উপাদান (Nutrients) হলো খাদ্যের সেই উপাদানসমূহ, যা আমাদের শরীরের বৃদ্ধি, রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। 

ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট (Macronutrients) / খাদ্যের প্রধান উপাদান (Proximate principles of food): ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট হলো সেই পুষ্টি উপাদানগুলো যা আমাদের শরীর বৃদ্ধি, বিকাশ, মেরামত এবং শক্তি সরবরাহের জন্য প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করে। এগুলো হলো:

১. কার্বোহাইড্রেট (Carbohydrates):

কার্বোহাইড্রেট হল প্রধান শক্তির উৎস। এগুলো সহজে শরীর দ্বারা ব্যবহৃত হয় এবং তাৎক্ষণিক শক্তি সরবরাহ করে।

  • উৎস: চাল, গম, আলু, শাকসবজি, ফলমূল, চিনি।
  • ধরন: সরল (মনোস্যাকারাইড, ডাইস্যাকারাইড) এবং জটিল (পলিস্যাকারাইড)।
২. প্রোটিন (Proteins):

প্রোটিন শরীরের কোষ, টিস্যু এবং অঙ্গের গঠন ও মেরামত করে। এছাড়া এনজাইম, হরমোন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তৈরিতেও প্রোটিন প্রয়োজন।

  • উৎস: মাংস, মাছ, ডিম, দুধ, ডাল, বাদাম।
  • ধরন: সম্পূর্ণ প্রোটিন (যাতে সবগুলো প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে) এবং অসম্পূর্ণ প্রোটিন।
৩. ফ্যাট বা স্নেহ পদার্থ  (Fats):

চর্বি শক্তির একটি ঘনীভূত উৎস এবং এটি কোষের গঠন, হরমোন উৎপাদন এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

  • উৎস: তেল, মাখন, চিজ, বাদাম, বীজ।
  • ধরন: স্যাচুরেটেড ফ্যাট, আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (মোনো এবং পলিস্যাচুরেটেড), ট্রান্স ফ্যাট।
. জল (Water):

জল শরীরের প্রতিটি কোষের জন্য অপরিহার্য। এটি বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান পরিবহন, বর্জ্য পদার্থ বের করা এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

  • উৎস: পানীয় জল, ফল, শাকসবজি।
মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট(Micronutrients/Accessory Factors) / খাদ্যের অণু উপাদান  (Protective principles of food): মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট হলো সেই পুষ্টি উপাদানগুলো যা আমাদের শরীর অল্প পরিমাণে ব্যবহার করে, তবে তারা সুস্থ থাকার জন্য অপরিহার্য। এগুলো হলো:

. ভিটামিন (Vitamins):

ভিটামিন শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সহায়ক। এগুলো শরীরের কোষের রক্ষণাবেক্ষণ, বৃদ্ধি এবং উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • উৎস: শাকসবজি, ফল, দুধ, ডিম, মাছ।
  • ধরন: ফ্যাট-দ্রবণীয় (A, D, E, K) এবং জলে-দ্রবণীয় (B-কমপ্লেক্স, C)।
দ্রাব্যতা অনুযায়ী ভিটামিনের শ্রেণীবিভাগ:

ভিটামিনগুলিকে দ্রাব্যতার উপর ভিত্তি করে দুটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা হয়:

1. ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন:

  • ভিটামিন A (রেটিনল): দৃষ্টি, ত্বকের স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যান্টিজেরোপথালমিক (Antixerophthalmic) ভিটামিন কাকে বলে? 

ভিটামিন A কে অ্যান্টিজেরোপথালমিক ভিটামিন বলে। 

কারণ: "Antixerophthalmic" শব্দটি "Xerophthalmia"-র প্রতিরোধক বোঝায়। Xerophthalmia হলো একটি চোখের রোগ যা ভিটামিন-A র অভাবে হতে পারে। এই রোগের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে শুষ্ক চোখ, রাতের অন্ধত্ব এবং গুরুতর ক্ষেত্রে স্থায়ী দৃষ্টিশক্তি হ্রাস। ভিটামিন এ স্বাস্থ্যকর দৃষ্টি, বিশেষ করে রাতের দৃষ্টি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • ভিটামিন D (ক্যালসিফেরল): হাড়ের স্বাস্থ্য, ক্যালসিয়াম শোষণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যান্টিরাকাইটিক  (Antirachitic) ভিটামিন কাকে বলে?

ভিটামিন D কে অ্যান্টিরাকাইটিক ভিটামিন বলা হয়ে থাকে। 

কারণ: ভিটামিন D রিকেট প্রতিরোধ করে বলেই একে অ্যান্টিরাকাইটিক ভিটামিন বলা হয়।
  • ভিটামিন E (টোকোফেরোল): অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে এবং কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। 
অ্যান্টিএস্টেরিলিটি (Antisterility) ভিটামিন কাকে বলে?

অ্যান্টিএস্টেরিলিটি (Antisterility) ভিটামিন হিসেবে ভিটামিন ই (Vitamin E) সবচেয়ে বেশি পরিচিত।

  • ভিটামিন K (ফাইলোকুইনন/ন্যাপথোকুইনন): রক্ত ​​জমাট বাঁধার জন্য প্রয়োজনীয়। 
কোয়াগুলেশন ভিটামিন (Coagulation Vitamin) বা অ্যান্টিহেমোরেজিক ভিটামিন (Antihemorrhagic Vitamin) কাকে বলে?

ভিটামিন K (Vitamin K) কে কোয়াগুলেশন ভিটামিন (coagulation vitamin) বা অ্যান্টিহেমোরেজিক ভিটামিন (antihemorrhagic vitamin) বলা হয়। 

কারণ:
  • ভিটামিন K রক্ত ​​জমাট বাঁধার জন্য অপরিহার্য। এটি রক্তে উপস্থিত ক্লটিং ফ্যাক্টরগুলিকে সক্রিয় করে, যা রক্তক্ষরণ বন্ধ করে এবং আঘাত থেকে রক্ষা করে।
  • ভিটামিন K এর অভাব রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ায়।

ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিনগুলি শরীরের চর্বিযুক্ত টিস্যুতে সংরক্ষিত থাকে এবং দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে থাকতে পারে।

2. জলে-দ্রবণীয় ভিটামিন:

  • ভিটামিন B কমপ্লেক্স: শক্তি উৎপাদন, স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা এবং কোষের বিপাকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন B কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে:
    • ভিটামিন B1 (থায়ামিন): এটি বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে, যেমন: আমাদের শরীরে খাদ্যকে খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে।  স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি স্নায়ু কোষগুলির মধ্যে সঠিকভাবে সিগনাল প্রেরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।হৃৎপিণ্ডের সুস্থ কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ভিটামিন B1 মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 
                   ভিটামিন B1 এর অভাবে:  ভিটামিন B1 এর অভাবে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে,
                   যেমন:ক্লান্তি, দুর্বলতা, পেশীর খিঁচুনি, হার্টের গতি বৃদ্ধি পাওয়া, স্মৃতিশক্তি লঘু
                   হওয়া, খিদের অভাব।
    • ভিটামিন B2 (রাইবোফ্লেভিন): খাবার থেকে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে। এটি শরীরের টিস্যু গঠন এবং মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয়। এটি ত্বকের কোষ গঠনে এবং চুল ও নখের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে, যা শরীরে অক্সিজেন পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ। 
                   ভিটামিন B2 এর অভাবে: ভিটামিন বি২ এর অভাবে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে,
                   যেমন: চিড়চিড়ে ঠোঁট, ত্বকের সমস্যা, চুল পড়া, ক্লান্তি । 
    • ভিটামিন B3 (নিয়াসিন): খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে আমাদের শরীরকে সাহায্য করে। কোষের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।  কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ভিটামিন B3 রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। ভিটামিন B3 মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটার গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি ত্বকের কোষের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে এবং শুষ্ক ত্বক ও জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।
    • ভিটামিন B5 (প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড): আমাদের শরীরে খাবারকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে।চর্বি ও প্রোটিন ভাঙতে সাহায্য করে। হরমোন উৎপাদন করতে সাহায্য করে। লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা রাখে, যা শরীরে অক্সিজেন পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ। স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। 
                   ভিটামিন B5 এর অভাবে: ভিটামিন B5 এর অভাবে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে,
                   যেমন:ক্লান্তি, দুর্বলতা। 
    • ভিটামিন B6 (পাইরিডক্সিন): আমাদের শরীরে খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে। হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে। ভিটামিন B6 নিউরোট্রান্সমিটার তৈরিতে সাহায্য করে, যা মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি শরীরে এন্টিবডি (antibody) তৈরিতে ভূমিকা রাখে, যা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার মতো রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত ভিটামিন B6 গুরুত্বপূর্ণ, এটি বমি বমি ভাব কমাতে এবং শিশুর ডিএনএ (DNA) তৈরিতে সাহায্য করে। ভিটামিন B6 চর্মের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।(গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিন 1.9 মিলিগ্রাম ভিটামিন B6 প্রয়োজন।)
    • ভিটামিন B7 (বায়োটিন): আমাদের শরীরে খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে। কোষের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। চুল, ত্বক ও নখের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত ভিটামিন B7 গুরুত্বপূর্ণ। 
                   (ভিটামিন H (Vitamin H): ভিটামিন এইচ (Vitamin H) হল বায়োটিন (Biotin)-এর আরেকটি
                   নাম। এটি ভিটামিন B (Vitamin B) কমপ্লেক্সের একটি অংশ।)

                   ভিটামিন বি৭ এর অভাবে ভিটামিন B7 এর অভাবে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে,
                   যেমন: চুল পড়া, নখ ভাঙা, ক্লান্তি, ত্বকের সমস্যা, মানসিক সমস্যা।

    • ভিটামিন B9 (ফোলেট/ফলিক অ্যাসিড ): DNA (Deoxyribonucleic acid) এবং RNA (Ribonucleic acid) এই গুরুত্বপূর্ণ নিউক্লিক এসিড (nucleic acid) গুলো তৈরিতে সাহায্য করে। নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে, যা শরীরের টিস্যু গঠন এবং মেরামতের জন্য জরুরি। লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ভিটামিন B9 মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। 
                   ভিটামিন B9 এর অভাবে: ভিটামিন B9 এর অভাবে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে,
                   যেমন: ক্লান্তি, দুর্বলতা, শাসকষ্ট, খিদের অভাব, অ্যানিমিয়া।
    • ভিটামিন B12 (সায়ানোকোবালমিন): স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। লাল রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে। DNA সংশ্লেষণ অর্থাৎ এটি কোষের বিভাজন এবং নতুন কোষের সৃষ্টিতেও সাহায্য করে।

      ভিটামিন B12 এর অভাবে: ভিটামিন বি১২ এর অভাবে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন: শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি, দুর্বলতা, মানসিক সমস্যা।

  • ভিটামিন C (অ্যাসকরবিক অ্যাসিড): অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, কোলাজেন উৎপাদন এবং লোহার শোষণে সহায়তা করে।

নিম্নে একটি ছকের মাধ্যমে বিভিন্ন ভিটামিনের উৎস, প্রধান কাজ  প্রদর্শন করা হলো:

ভিটামিনের নামউৎসপ্রধান কাজ
ভিটামিন এ (A)গাজর, মিষ্টি আলু, পালং শাক, ডিমদৃষ্টিশক্তি উন্নত করা, ত্বক ও শ্লেষ্মার সুরক্ষা
ভিটামিন বি১ (B1)দানা শস্য, মাংস, ডিম, শিমশক্তি উৎপাদন, স্নায়ুর কার্যকারিতা
ভিটামিন বি২ (B2)দুধ, পনির, শাকসবজি, মাংসশক্তি উৎপাদন, ত্বকের স্বাস্থ্য
ভিটামিন বি৩ (B3)মাংস, মাছ, বাদাম, দানা শস্যকোষে শক্তি উৎপাদন, হজম প্রক্রিয়া
ভিটামিন বি৬ (B6)মাছ, কলা, বাদাম, মুরগিপ্রোটিন বিপাক, স্নায়ুর কার্যকারিতা
ভিটামিন বি১২ (B12)মাংস, মাছ, ডিম, দুধরক্তকণিকা উৎপাদন, স্নায়ুর কার্যকারিতা
ভিটামিন সি (C)কমলা, লেবু, স্ট্রবেরি, ব্রকোলিরোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ক্ষত সেরে ওঠা
ভিটামিন ডি (D)সূর্যালোক, মাছ, ডিম, মাশরুমহাড়ের স্বাস্থ্য, ক্যালসিয়াম শোষণ
ভিটামিন ই (E)বাদাম, বীজ, পালং শাক, ব্রকোলিত্বকের সুরক্ষা, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
ভিটামিন কে (K)পালং শাক, ব্রকোলি, পেঁয়াজরক্ত জমাট বাঁধায় সাহায্য করা

"ভিটামিন পি" বলতে ফ্ল্যাভোনয়েড (Flavonoids)-এর একটি গ্রুপকে বোঝানো হয়। এগুলি প্রাকৃতিক যৌগ যা ফল, শাকসবজি এবং অন্যান্য উদ্ভিদ উৎসে পাওয়া যায়। ফ্ল্যাভোনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।

. খনিজ পদার্থ (Minerals):

খনিজ পদার্থ শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে সহায়ক। এগুলো হাড় এবং দাঁতের গঠন, রক্ত সঞ্চালন এবং অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমে অংশ নেয়।

  • উৎস: শাকসবজি, ফল, মাংস, মাছ, ডাল, বাদাম।
  • ধরন: ম্যাক্রোমিনারেলস (যেমন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম) এবং মাইক্রোমিনারেলস বা ট্রেস এলিমেন্টস (যেমন আয়রন, জিঙ্ক, কপার)।

খাদ্যে প্রধান খনিজ উপাদান বলতে বোঝায় সেই সব খনিজ যা শরীরের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে অত্যাবশ্যক। এসব খনিজ উপাদান শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। 

ম্যাক্রোমিনারেল (Macro Minerals) বা প্রধান খনিজ উপাদান:

ম্যাক্রোমিনারেল হল মানব শরীরে অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানগুলি। এগুলি বিভিন্ন শারীরিক কার্যাবলিতে জড়িত থাকে এবং সুস্থ থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো - ক্যালসিয়াম (Ca), ফসফরাস (P), পটাসিয়াম (K), সোডিয়াম (Na), ম্যাগনেসিয়াম Mg), সালফার (S), ক্লোরিন (Cl), লোহা (Fe)। 

নিম্নে একটি ছকের মাধ্যমে ম্যাক্রোমিনারেলের নাম, উৎস, এবং প্রধান কাজ প্রদর্শন করা হলো:

ম্যাক্রোমিনারেলের নামউৎসপ্রধান কাজ
ক্যালসিয়াম (Calcium)দুধ, দই, পনির, শাকসবজিহাড় ও দাঁতের গঠন, স্নায়ু ও পেশির কার্যকারিতা
ফসফরাস (Phosphorus)মাংস, মাছ, ডিম, বাদামশক্তি উৎপাদন, হাড় ও দাঁতের গঠন
পটাসিয়াম (Potassium)কলা, কমলা, আলু, পালং শাকস্নায়ুর কার্যকারিতা, পেশির সংকোচন
সোডিয়াম (Sodium)লবণ, স্যুপ, প্রক্রিয়াজাত খাবারতরল ভারসাম্য, স্নায়ু সংকেত প্রেরণ
ম্যাগনেসিয়াম (Magnesium)বাদাম, বীজ, শাকসবজি, শস্যপ্রোটিন সংশ্লেষণ, পেশি ও স্নায়ুর কার্যকারিতা
ক্লোরাইড (Chloride)লবণ, স্যুপ, প্রক্রিয়াজাত খাবারপিএইচ ভারসাম্য, হজমে সাহায্য
সালফার (Sulfur)মাংস, মাছ, ডিম, শিমপ্রোটিন গঠনে সহায়তা, কোষের কার্যকারিতা
লোহা (Iron)                           লাল মাংস, শাকসবজি,            রক্ত কোষ তৈরিতে সাহায্য করে, অক্সিজেন 
                                              শুকনো ফল, গুড়, খেজুর,       পরিবহনে সাহায্য করে
                                               সয়াবিন 

* ICMR- Indian Council of Medical Research লোহাকে Macro Elements-এ অন্তর্ভুক্ত করেছ।

মাইক্রোমিনারেল (Micro Minerals) বা ট্রেস মিনারেল (Trace Minerals) বা অণুপৌষ্টিক খনিজ উপাদান :
মাইক্রোমিনারেল হল মানব শরীরে অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণে প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানগুলি। তবুও, এগুলি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক কার্যাবলিতে জড়িত এবং সুস্থ থাকার জন্য অপরিহার্য।এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো - ম্যাঙ্গানিজ (Mn), তামা (Cu), আয়োডিন (I), জিঙ্ক (Zn), ফ্লুওরিন্ (F)।

নিচে মাইক্রোমিনারেল (Macro Minerals) বা ট্রেস মিনারেল (Trace Minerals) এর গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং তাদের উৎসের একটি চার্ট দেখানো হলো:

মিনারেলের নামগুরুত্বপূর্ণ কাজপ্রধান উৎস


জিঙ্ক (Zinc)ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে, এনজাইম কার্যক্রমে সাহায্য করেমাংস, মাছ, বাদাম
কপার (Copper)লোহিত রক্তকণিকা গঠনে সাহায্য করে, স্নায়ু সিস্টেমের কার্যক্রমে ভূমিকা রাখেশস্য, বাদাম, মটরশুটি
ম্যাঙ্গানিজ (Manganese)হাড়ের গঠনে সাহায্য করে, এনজাইম কার্যক্রমে সহায়কবাদাম, শস্য, চা
আয়োডিন (Iodine)থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করেআয়োডিনযুক্ত লবণ, সামুদ্রিক খাবার
সেলেনিয়াম (Selenium)অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রটেকশন দেয়, থাইরয়েড কার্যক্রমে সাহায্য করেবাদাম, মাছ, ডিম
ফ্লুরাইড (Fluoride)দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা করে, দাঁতের ক্ষয় রোধ করেফ্লুরাইডযুক্ত পানি, চা, সামুদ্রিক মাছ