** Study Nutrition ওয়েবসাইটে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাগত ** নিউট্রিশন সাবজেক্ট এর প্রথম বাংলা ওয়েবসাইট **

1.9 Nutrition (পুষ্টি )

পুষ্টি (Nutrition) হলো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীর খাদ্য থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে, যা দেহের বৃদ্ধি, রক্ষণাবেক্ষণ, এবং সঠিক কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য। পুষ্টি সঠিকভাবে নিশ্চিত করতে সুষম খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সংজ্ঞা:

পুষ্টি হলো জীবন্ত প্রাণীর জীবন ধারণ, বৃদ্ধি, বিকাশ, মেরামত ও কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গ্রহণ ও শোষণের প্রক্রিয়া।

পুষ্টির গুরুত্ব
  1. শরীরের বৃদ্ধি ও বিকাশ: শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের জন্য পুষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি দেহের সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত করে।
  2. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: পর্যাপ্ত পুষ্টি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যা আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।
  3. শক্তি সরবরাহ: পুষ্টি শরীরের দৈনন্দিন কাজকর্ম ও শারীরিক কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে।
  4. সঠিক মানসিক স্বাস্থ্য: সুষম খাদ্য মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক। কিছু পুষ্টি উপাদান যেমন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি১২, এবং ফোলেট মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

পুষ্টির ঘাটতি:

  • রোগ: পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে।
  • দুর্বলতা: পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি আমাদের দুর্বল করে তুলতে পারে।
  • বৃদ্ধি ব্যাহত: পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি আমাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে।
  • কাজের ক্ষমতা হ্রাস: পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি আমাদের কর্মক্ষমতা হ্রাস করতে পারে।
প্রধান পুষ্টি উপাদানসমূহ

পুষ্টি উপাদান প্রধানত ছয়টি ভাগে বিভক্ত:

১. কার্বোহাইড্রেট (Carbohydrates)

কার্বোহাইড্রেট শরীরের প্রধান শক্তির উৎস।

  • উৎস: চাল, গম, আলু, শাকসবজি, ফলমূল, চিনি।
  • কাজ: দ্রুত শক্তি সরবরাহ।

২. প্রোটিন (Proteins)

প্রোটিন দেহের কোষ, টিস্যু এবং অঙ্গের গঠন ও মেরামত করে।

  • উৎস: মাংস, মাছ, ডিম, দুধ, ডাল, বাদাম।
  • কাজ: পেশী গঠন, কোষের মেরামত।

৩. স্নেহপদার্থ বা ফ্যাট (Fats)

ফ্যাট ঘনীভূত শক্তির উৎস এবং কোষের গঠন, হরমোন উৎপাদন এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

  • উৎস: তেল, মাখন, চিজ, বাদাম, বীজ।
  • কাজ: শক্তি সংরক্ষণ, হরমোন উৎপাদন।

৪. ভিটামিন (Vitamins)

ভিটামিন শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সহায়ক।

  • উৎস: শাকসবজি, ফল, দুধ, ডিম, মাছ।
  • কাজ: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, কোষের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ।

৫. খনিজ পদার্থ (Minerals)

খনিজ পদার্থ শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে সহায়ক।

  • উৎস: শাকসবজি, ফল, মাংস, মাছ, ডাল, বাদাম।
  • কাজ: হাড়ের গঠন, রক্ত সঞ্চালন, এনজাইমের কার্যক্রম।

৬. জল (Water)

জল শরীরের প্রতিটি কোষের জন্য অপরিহার্য।

  • উৎস: পানীয় জল, বিভিন্ন পানীয়, ফল, শাকসবজি।
  • কাজ: পুষ্টি পরিবহন, বর্জ্য পদার্থ নির্গমন, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ।
সুষম খাদ্য

সুষম খাদ্য হলো এমন খাদ্য যা সমস্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের সঠিক অনুপাত সরবরাহ করে এবং স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিকের যত্ন নেয়।

  • বৈশিষ্ট্য:
    • প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের সঠিক অনুপাত।
    • ফল, শাকসবজি, দানা শস্য, প্রোটিন, এবং স্নেহপদার্থর ভারসাম্য।
    • সঠিক পরিমাণে ফাইবার সরবরাহ করে।
    • কম পরিমাণে শর্করা, লবণ, এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট।
পুষ্টির বিভিন্ন পর্যায়:

জীবন্ত প্রাণীর জীবনে পুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শরীরের গঠন, বৃদ্ধি, বিকাশ, মেরামত ও কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গ্রহণ ও শোষণের প্রক্রিয়া।

পুষ্টির বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে, যা নিম্নরূপ:

১. গ্রহন (Ingestion)

খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ। এটি হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে খাদ্য মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।

  • উদাহরণ: খাবার খাওয়া, পানীয় পান করা।
২. হজম (Digestion)

হজম হলো খাদ্যকে ছোট ছোট পুষ্টি উপাদানে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া, যাতে শরীর সহজে তা শোষণ করতে পারে।

  • মুখ: চিবানো এবং লালা দ্বারা খাদ্য ভাঙা শুরু হয়।
  • পাকস্থলী: পাকস্থলীর অ্যাসিড এবং এনজাইম খাদ্যকে আরও ভেঙে দেয়।
  • ক্ষুদ্রান্ত্র: এনজাইম এবং পিত্ত খাদ্যকে চূড়ান্তভাবে ভেঙে ফেলে।
৩. শোষণ (Absorption)

শোষণ হলো ক্ষুদ্রান্ত্রের দেয়ালের মাধ্যমে পুষ্টি উপাদানগুলো রক্তে প্রবেশ করার প্রক্রিয়া।

  • ক্ষুদ্রান্ত্র: এখানে পুষ্টি উপাদান রক্তপ্রবাহে শোষিত হয় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হয়।
৪. পরিবহন (Transportation)

শোষিত পুষ্টি উপাদানগুলি রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন কোষে পরিবাহিত হয়।

  • রক্তপ্রবাহ: পুষ্টি উপাদানগুলি শরীরের বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হয়।
৫. বিপাক (Metabolism)

বিপাক হলো পুষ্টি উপাদানগুলি শরীরের কোষে ব্যবহারের প্রক্রিয়া, যা শক্তি উৎপাদন, কোষের মেরামত এবং বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।

  • অ্যানাবলিজম: নতুন কোষ গঠন এবং বৃদ্ধির জন্য পুষ্টি উপাদান ব্যবহার করা।
  • ক্যাটাবলিজম: শক্তি উৎপাদনের জন্য পুষ্টি উপাদান ভাঙা।
৬. উচ্ছেদ (Excretion)

উচ্ছেদ হলো শরীরের অব্যবহৃত বা বর্জ্য পদার্থ নির্গমন করার প্রক্রিয়া।

  • মলত্যাগ: খাদ্যের অব্যবহৃত অংশ মল আকারে নির্গত হয়।
  • প্রস্রাব: বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত পুষ্টি প্রস্রাবের মাধ্যমে নির্গত হয়।

পুষ্টি প্রক্রিয়ার ধাপগুলি একটি ছকের মাধ্যমে নিচে দেখানো হলো:

ধাপ

নাম

প্রক্রিয়া এবং কার্যক্রম
1গ্রহণ (Ingestion)খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা, যা মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে
2পরিপাক (Digestion)খাদ্য ভাঙানো ও রসায়নিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন করে ছোট অংশে পরিণত করা
3শোষণ (Absorption)ভাঙানো খাদ্য উপাদান অন্ত্রের মাধ্যমে রক্তে শোষণ করা
4পরিবহন (Transport)শোষিত পুষ্টি উপাদান রক্ত ও লসিকানালি মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে পরিবহন করা
5বিপাক (Metabolism)পুষ্টি উপাদানগুলি কোষে রূপান্তরিত হয়ে শক্তি উৎপাদন এবং শরীরের বিভিন্ন কার্যকলাপে ব্যবহার
6নিষ্কাশন (Excretion)অপাচ্য অংশ এবং বিপাকীয় বর্জ্য পদার্থ মল, মূত্র, ঘাম ইত্যাদির মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেওয়া