স্নেহপদার্থ (Lipids) বা ফ্যাট (Fat) বা চর্বি আমাদের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পাদন করে। ফ্যাটের কিছু প্রধান কাজ নিম্নে আলোচনা করা হলো:
ফ্যাটের প্রধান কাজ:
১. শক্তির উৎস
ফ্যাট শরীরের প্রধান শক্তির উৎসগুলির একটি। প্রতি গ্রাম ফ্যাট ৯ ক্যালরি শক্তি প্রদান করে, যা কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিনের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
২. কোষের গঠন
ফ্যাট কোষের মেমব্রেনের একটি প্রধান উপাদান। ফসফোলিপিড, যা কোষ মেমব্রেনের মূল গঠন উপাদান, তা ফ্যাট দ্বারা গঠিত।
৩. হরমোন উৎপাদন
ফ্যাট থেকে স্টেরয়েড হরমোন, যেমন এস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরন, এবং কর্টিসল উৎপন্ন হয়। এই হরমোনগুলি শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।
৪. পুষ্টি শোষণ
ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন (এ, ডি, ই, এবং কে) শোষণ এবং সংরক্ষণে সহায়ক। এই ভিটামিনগুলি শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
৫. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ
ফ্যাট শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ত্বকের নিচে থাকা ফ্যাট তাপ শোষণ এবং সংরক্ষণ করে, ফলে শরীর গরম থাকে।
৬. স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রম
মাইলিন শিথ, যা স্নায়ুর আশপাশে একটি প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে, তা ফ্যাট দ্বারা গঠিত। এটি স্নায়ুর সঙ্কেত প্রেরণে সহায়ক।
৭. অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলির সুরক্ষা
ফ্যাট শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলি (যেমন কিডনি, হার্ট) সুরক্ষিত রাখতে কাজ করে। এটি অঙ্গগুলির চারপাশে একটি কুশন সরবরাহ করে, যা আঘাত থেকে সুরক্ষা দেয়।
৮. ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ
ফ্যাট ধীরে হজম হয়, যা দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণতার অনুভূতি প্রদান করে। এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
ফ্যাটের অভাবজনিত ফল:
ফ্যাট শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর অভাব বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। ফ্যাটের অভাবে নিম্নলিখিত সমস্যা গুলো দেখা দিতে পারে:
১. শক্তির অভাব
ফ্যাটের অভাবে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে শক্তি পায় না, ফলে দুর্বলতা ও ক্লান্তি দেখা দেয়।
২. ভিটামিনের ঘাটতি
ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন (A, D, E, এবং K) শোষণে সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার ফলে এই ভিটামিনগুলির ঘাটতি হতে পারে। এ কারণে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজ বিঘ্নিত হয়।
৩. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
ফ্যাটের অভাবে শরীরে প্রয়োজনীয় হরমোন তৈরি হতে পারে না। এতে মাসিক চক্রের সমস্যা, ইনফার্টিলিটি, এবং অন্যান্য হরমোন সম্পর্কিত সমস্যা দেখা দেয়।
৪. ত্বকের সমস্যা
ফ্যাটের অভাবে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া, ত্বকে চুলকানি, ফুসকুড়ি ও অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৫. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের সমস্যা
ফ্যাটের অভাবে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কমে যায়, ফলে ঠান্ডা পরিবেশে শরীর দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে।
৬. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যাওয়া
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বজায় রাখতে ফ্যাট গুরুত্বপূর্ণ। ফ্যাটের অভাবে মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্যে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৭. স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা
মাইলিন শীথের অভাবে স্নায়ুতন্ত্রের কাজ ব্যাহত হয়। এতে স্নায়ুতন্ত্রের রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৮. ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের সমস্যা
ফ্যাট ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফ্যাটের অভাবে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের সমস্যা দেখা দিতে পারে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
৯. অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলির সুরক্ষার অভাব
ফ্যাট অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলিকে সুরক্ষা প্রদান করে। ফ্যাটের অভাবে অঙ্গগুলি আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
১০. গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদান সমস্যা
ফ্যাটের অভাবে গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যদানের সময় পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে, যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।