** Study Nutrition ওয়েবসাইটে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাগত ** নিউট্রিশন সাবজেক্ট এর প্রথম বাংলা ওয়েবসাইট **

2.3 Specific Deficiency Disorder (কয়েকটি বিশেষ পুষ্টি উপাদান তাদের অভাবজনিত ফল)

 কয়েকটি বিশেষ পুষ্টি উপাদান তাদের অভাবজনিত ফল সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো:

প্রোটিন এর অসামঞ্জস্যতাজনিত প্রভাব : প্রোটিনের অসামঞ্জস্যতা বা প্রোটিনের অভাব শরীরে বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রোটিন মানবদেহের জন্য অপরিহার্য একটি পুষ্টি উপাদান যা কোষ, টিস্যু এবং অঙ্গের গঠনে সহায়তা করে।

তবে, যখন প্রোটিনের মাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে যায়, তখন এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

প্রোটিনের অসামঞ্জস্যতার লক্ষণ:

  • প্রোটিনের অভাব: ক্লান্তি, পেশী দুর্বলতা, ওজন হ্রাস, চুল পড়া, শুষ্ক ত্বক, এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
  • অতিরিক্ত প্রোটিন: বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, মাথাব্যথা, এবং নির্জলীকরণ।
  • কিডনি রোগ: পায়ে ফোলাভাব, প্রস্রাবের পরিবর্তন, ক্লান্তি, এবং উচ্চ রক্তচাপ।
  • যকৃতের রোগ: পেটে ফোলাভাব, পায়ে ফোলাভাব, ক্লান্তি, পেটে ব্যথা, এবং ত্বক ও চোখে হলুদ ভাব।
ফ্যাট এর অসামঞ্জস্যতাজনিত প্রভাব: ফ্যাট আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য। এগুলি শক্তি সরবরাহ করে, কোষগুলিকে রক্ষা করে, হরমোন তৈরি করে, এবং ভিটামিন শোষণে সহায়তা করে।

তবে, যখন ফ্যাটের মাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে যায়, তখন এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

ফ্যাটের অসামঞ্জস্যতার লক্ষণ:

  • ফ্যাটের অভাব: ক্লান্তি, পেশী দুর্বলতা, শুষ্ক ত্বক, এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
  • অতিরিক্ত ফ্যাট: ওজন বৃদ্ধি, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি, এবং টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি।
  • অন্তর্নিহিত চিকিৎসা অবস্থার উপর নির্ভর করে।
কার্বোহাইড্রেট এর অসামঞ্জস্যতাজনিত প্রভাব: কার্বোহাইড্রেট আমাদের শরীরের জন্য প্রধান শক্তির উৎস। এগুলি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, পেশীর কার্যকারিতা, এবং হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

তবে, যখন কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে যায়, তখন এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

কার্বোহাইড্রেটের অসামঞ্জস্যতার লক্ষণ:

  • কার্বোহাইড্রেটের অভাব: ক্লান্তি, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, বিরক্তি, এবং মনোযোগের অভাব।
  • অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট: ওজন বৃদ্ধি, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ রক্তে শর্করার মাত্রা, টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি, এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি।
  • অন্তর্নিহিত চিকিৎসা অবস্থার উপর নির্ভর করে।

বিভিন্ন ভিটামিন এর অসামঞ্জস্যতাজনিত প্রভাব: বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব বা অসামঞ্জস্যতা শরীরে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। প্রতিটি ভিটামিনের নির্দিষ্ট ভূমিকা ও প্রভাব রয়েছে। নিচে বিভিন্ন ভিটামিনের অভাবজনিত সমস্যাগুলো তুলে ধরা হলো:

ভিটামিন A (রেটিনল)
  • অভাবের প্রভাব: রাত্রিকালীন অন্ধত্ব, চোখের শুষ্কতা, চর্মরোগ, শিশুদের বৃদ্ধি ব্যাহত।
ভিটামিন B কমপ্লেক্স
  1. ভিটামিন B1 (থায়ামিন)
    • অভাবের প্রভাব: বেরিবেরি, দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা, স্নায়ুর সমস্যা।
  2. ভিটামিন B2 (রিবোফ্লাভিন)

    • অভাবের প্রভাব: মুখের কোণে ফাটল, জিহ্বার ফোলাভাব, চোখের সমস্যা।
  3. ভিটামিন B3 (নায়াসিন)

    • অভাবের প্রভাব: পেল্লাগ্রা, ডায়রিয়া, চর্মরোগ, মস্তিষ্কের সমস্যা।
  4. ভিটামিন B5 (প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড)

    • অভাবের প্রভাব: অবসাদ, মাথাব্যথা, উত্তেজনা, পেশীর খিঁচুনি।
  5. ভিটামিন B6 (পাইরিডোক্সিন)

    • অভাবের প্রভাব: অ্যানিমিয়া, চর্মরোগ, অবসাদ, স্নায়ুর সমস্যা।
  6. ভিটামিন B7 (বায়োটিন)

    • অভাবের প্রভাব: চুল পড়া, ত্বকের সমস্যা, বিষন্নতা।
  7. ভিটামিন B9 (ফোলেট)

    • অভাবের প্রভাব: অ্যানিমিয়া, গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে জন্মগত ত্রুটি।
  8. ভিটামিন B12 (কোবালামিন)

    • অভাবের প্রভাব: অ্যানিমিয়া, স্নায়ুর সমস্যা, স্মৃতিভ্রংশ।
ভিটামিন C (অ্যাসকরবিক অ্যাসিড)
  • অভাবের প্রভাব: স্কার্ভি, চামড়ার সমস্যা, রক্তক্ষরণ, ইমিউনিটির সমস্যা।
ভিটামিন D (ক্যালসিফেরল)
  • অভাবের প্রভাব: রিকেটস, অস্টিওম্যালাসিয়া, হাড়ের দুর্বলতা।
ভিটামিন E (টোকোফেরল)
  • অভাবের প্রভাব: স্নায়ুর সমস্যা, মাংসপেশীর দুর্বলতা, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা।
ভিটামিন K
  • অভাবের প্রভাব: রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ।
বিভিন্ন খনিজ লবণের এর অসামঞ্জস্যতাজনিত প্রভাব : খনিজ লবণগুলো শরীরের সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলোর অভাব বা অসামঞ্জস্যতা বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। নিচে বিভিন্ন খনিজ লবণের অভাবজনিত প্রভাবগুলো তুলে ধরা হলো:

ক্যালসিয়াম
  • অভাবের প্রভাব: অস্টিওপোরোসিস, হাড় দুর্বলতা, দাঁতের ক্ষয়, মাংসপেশীর খিঁচুনি, হৃদযন্ত্রের সমস্যা।
লোহা (আয়রন)
  • অভাবের প্রভাব: অ্যানিমিয়া, অবসাদ, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া।
পটাসিয়াম
  • অভাবের প্রভাব: মাংসপেশীর দুর্বলতা, খিঁচুনি, হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা, ক্লান্তি, কোষ্ঠকাঠিন্য।
সোডিয়াম
  • অভাবের প্রভাব: অবসাদ, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, রক্তচাপ কমে যাওয়া, স্নায়ুর সমস্যা।
ম্যাগনেসিয়াম
  • অভাবের প্রভাব: মাংসপেশীর খিঁচুনি, অবসাদ, অস্থিরতা, হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা, হাড়ের সমস্যা।
ফসফরাস
  • অভাবের প্রভাব: হাড়ের দুর্বলতা, অবসাদ, ক্ষুধামন্দা, হাড় ভঙ্গুরতা।
জিঙ্ক
  • অভাবের প্রভাব: ইমিউনিটির দুর্বলতা, ক্ষত সারানোর ধীরগতি, চর্মরোগ, গন্ধ এবং স্বাদ অনুভূতির কমে যাওয়া।
আয়োডিন
  • অভাবের প্রভাব: গলগণ্ড, হাইপোথাইরয়েডিজম, মানসিক উন্নয়নে বিলম্ব, ক্লান্তি।
সেলেনিয়াম
  • অভাবের প্রভাব: হৃদযন্ত্রের সমস্যা, ইমিউনিটির দুর্বলতা, মানসিক সমস্যায় ভোগা, কেশ ও নখের সমস্যা।
ম্যাঙ্গানিজ
  • অভাবের প্রভাব: হাড়ের দুর্বলতা, মাংসপেশীর সমস্যা, প্রজনন ক্ষমতার হ্রাস।
কপার
  • অভাবের প্রভাব: অ্যানিমিয়া, হাড়ের দুর্বলতা, ইমিউনিটির দুর্বলতা, হার্টের সমস্যা।
ক্রোমিয়াম
  • অভাবের প্রভাব: রক্তে শর্করার মাত্রার অস্বাভাবিকতা, ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যাওয়া।
মলিবডেনাম
  • অভাবের প্রভাব: বিরল হলেও এনজাইমের কার্যকারিতা বিঘ্নিত হতে পারে, মাংসপেশীর দুর্বলতা।

অ্যামিনো অ্যাসিড অসামঞ্জস্যতার লক্ষণ: অ্যামিনো অ্যাসিড হল জৈব যৌগ যা কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন এবং প্রায়শই সালফার ধারণ করে।

অ্যামিনো অ্যাসিড অসামঞ্জস্যতা শরীরে অ্যামিনো অ্যাসিডের অভাব বা অতিরিক্ত মাত্রার কারণে হতে পারে।

অ্যামিনো অ্যাসিডের অভাবের লক্ষণ:

  • ক্লান্তি
  • দুর্বলতা
  • পেশী ক্ষয়
  • শুষ্ক ত্বক
  • ভঙ্গুর চুল
  • দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা

অ্যামিনো অ্যাসিডের অতিরিক্ত মাত্রার লক্ষণ:

  • বমি বমি ভাব
  • বমি
  • ডায়রিয়া
  • পেটে ব্যথা
  • মাথাব্যথা
  • কিডনি পাথর
সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের অনুপাত:

সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য, তবে তাদের ভারসাম্যপূর্ণ অনুপাত বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

PUFA (Polyunsaturated Fatty Acids) ও SFA (Saturated Fatty Acids) হলো দুটি প্রধান ধরণের ফ্যাটি অ্যাসিড যা আমাদের খাদ্যে পাওয়া যায়।

স্বাস্থ্যের জন্য সর্বোত্তম PUFA:SFA অনুপাত:

  • PUFA: 6-10%
  • SFA: 10% এর কম
অর্থাৎ, PUFA-এর পরিমাণ SFA-এর চেয়ে বেশি হওয়া উচিত। কিছু গবেষণা 1:1 এর PUFA:SFA অনুপাতের পরামর্শ দেয়, তবে Dietary Guidelines for Indian অনুসারে PUFA:SFA অনুপাত: 0.8:1

সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের অসামঞ্জস্যতার লক্ষণ:

1. সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড এর অভাব বা অসামঞ্জস্যতা LDL ("খারাপ") কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে এতে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
2. অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড এর অভাব বা অসামঞ্জস্যতা HDL ("ভালো") কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে এতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমতে পারে।
3. অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড এর অসামঞ্জস্যতায় ফ্রিনোডার্মা নামক চর্মরোগ ও হতে পারে।